{Spoiler Alert/ The Batman (2022) চলচ্চিত্র-টি না দেখা থাকিলে পড়িবেন না}
দু’বছর গথাম-এর অলি-গলিতে দুষ্কৃতী-দিগের ত্রাস হইয়া উঠিবার পর যখন ব্যাটম্যান-রুপী ব্রুস দেখিলেন, অতি প্রিয় নগর “ম্যান-মেড” বন্যায় জলমগ্ন, তাঁহার বোধোদয় ঘটিল।
ব্রুস উপলব্ধি করিলেন, জনপদ তথা জনগণের সেবা করিবার উপযুক্ত পথ হিংসার নয়, ভালোবাসার। যিনি একদা গুন্ডা পিটাইয়া, “প্রতিহিংসা”-কেই নিজের পরিচয় বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি আজ ত্রাতা হইয়া পীড়িত-দের মাঝে অবতরণ করিলেন। “ওয়েন টাওয়ার” গজদন্ত-নির্মিত কিনা জানা নাই, তবে নায়ক অবশেষে যেন সেই মিনার হইতে প্রকৃতরূপে মর্ত্যে নামিলেন। ছিলেন আতঙ্ক, হইলেন আশা।
এই হৃদয়-পরিবর্তনের মূলে অবহেলিত অনাথ-দিগের করুণ কাহিনীর অবদান কতখানি, বলা দুরূহ। তবে একদা অসূর্যম্পশ্য নায়ক যখন সূর্যোদয়ের মূহুর্তে ক্রোড়ে শিশু লইয়া উদ্ধারকার্যে হাত লাগান, বন্যার জল ঠেলে জনতাকে পথপ্রদর্শন করেন, তখন রোমাঞ্চ হয় বৈকি!
সমাজ ও শিল্প পরস্পরের অনুপ্রেরণা। সেই প্রেরণা ইতিবাচক হইলে তবেই শিল্প আলাদা মাত্রা লাভ করে।
রক্ত-রাঙা ফ্রেমের ডান হতে বাঁয়ে নায়কের পিছু পিছু জনতা জল ভাঙিয়া চলিয়াছে, এই অনুপম দৃশ্য হইতে কি অনুধাবন করা উচিৎ, তা দর্শক-ই বলিবেন। ব্যাটম্যান-এর চলচ্চিত্রায়ণে পুঁজিবাদী সমাজের বিষময় পরিণতির উপর আলোকপাত ক্রিস্টোফার নোলান পূর্বেই করিয়াছিলেন, ম্যাট রিভস্ সেই পথেই যেন আরেক পা হাঁটিলেন।
রূপকথা আর অতিনায়কের গল্প মোড়ক মাত্র, তার ভিতর স্রষ্টা যদি কিছু ভাবনার খোরাক পুরিয়া না দেন, তবে দিনের শেষে তা বড়ই অনর্থক বোধ হয়। মুখোশ-পরিহিত অতিনায়ক তাঁর পিতৃদত্ত অর্থে সজ্জিত হইয়া মুষ্টির বলে দুষ্টের দমন করিতেছেন, এই আখ্যান প্রৌঢ় হইয়াছে। তাই পুনর্জন্ম সার্থক করিতে প্রয়োজন ছিল অভিনব ভাবনার। প্রায়ান্ধকার এই চলচ্চিত্রের উৎস হতে এই কাহিনীর অন্তিমলগ্নে যে আলোক উৎসারিত হইল, সেই রবিকিরণ-ই ব্যাটম্যান-এর এই নবজন্মের সবচে’ বড় প্রাপ্তি।
ইহাতে অতিনায়কের ভাবমূর্তির উত্থান হইল না অবনমন, তাহার বিচার কাল-ই করিবে।
– অভীককুমার শী
৮ই মার্চ ২০২২